‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়ানোর সুখ, পাকা জামের শাখায় চরে রঙ্গিন করি মুখ’। পল্লী কবি জসিম উদ্দিন এর লেখা এই শিশুতোষ কবিতায় প্রাণ জেগেছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠে। টসটসে ফলের রসময়তায় জেগেছে উৎসব। ফলোৎসবে লিচুর রাজত্ব শেষ হওয়ার পর এখন বাজার সরব করে রেখেছে আম-জাম। এ বছর ঈশ্বরদীতে প্রত্যাশিত ফলন না হওয়ায় লিচুর বাজার জমে না উঠলেও সরগরম হয়ে উঠেছে ুদে ফল জামের বাজার। ঈশ্বরদী উপজেলার মূলাডুলি ফলের আড়তে এখন চলছে রসনা রাঙ্গানো ফল জামের রাজত্ব। রবিবার ঈশ্বরদীর অন্যতম প্রধান ফল ও সবজি আড়ৎ মূলাডুলিতে গিয়ে দেখা যায় মধ্যম আকৃতির প্লাষ্টিক ঝুড়িতে স্তুপ আকারে রাখা হয়েছে জাম ফল। বিক্রয়ের জন্য সাজিয়ে রাখা জাম দুর থেকে দেখে মন ভরে যায়। সূর্যের আলো পড়ায় কুচকুচে কলো জামের গায়ে যেন খেলে যায় ঝকমকে বিকিরণ। দৃষ্টিতে প্রাণহরি জাম ফল খেতেও অসাধারণ। সম্পূর্ণ আলাদা স্বাদের এই মৌসুমী ফলের রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টির পানি পড়া মাত্রই লালা বরণ হয়ে উঠে জাম গাছ। তারপর পরিপক্কতা আসে এক সাথে। এক সাথে পেঁকে যাওয়ায় খুব অল্প দিনই মেলে জামের শাখায় উঠে মূখ রঙিন করার সুযোগ। স্বল্পকালীন এই ফলটি তাই সকলের কাছেই বেশ লোভনীয়।
কথা হলো মূলাডুলি ফল আড়তের আড়ৎদার আমিনুর রহমান বাবুর সাথে। তিনি জানালেন, জামের বাজার স্থায়ী হয় মাত্র এক পকাল সময়। এই সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে পাইকাররা মূলাডুলি আড়তে আসেন জাম কিনতে। রাজাপুর, মূলাডুলি ও গোপালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা তাদের বাড়ির আঙিনায় লাগানো হতে ফল বৃ থেকে সংগ্রহকৃত জাম বিক্রয়ের জন্য এখানে নিয়ে আসেন। এখান থেকেই ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা জাম ক্রয় করে বিভিন্ন জায়গায় বাজারজাত করে থাকেন। জাম ব্যবসায়ী খোকন শেখ জানান, মূলাডুলির এই আড়ৎ থেকে প্রতিদিন ৫/৭ ট্রাক জাম দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। মৌসুমের শুরুতে প্রতিকেজি জাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হলেও দাম পরে যাওয়ায় এখন তা বিক্রয় হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। এই হিসাবে মূলাডুলি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার জাম ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট সহ দেশে বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হচ্ছে।
জাম বিক্রেতা ফয়েজ উদ্দিন জানান, বাড়ির আঙিনায় লাগানো গাছের জাম সংগ্রহ করে আধা-এক মণ করে তারা আড়তে এনে বিক্রয় করেন। বানিজ্যিক ভিত্তিতে জাম চাষের সম্ভাবনার কথা নাকচ করে দিয়ে তিনি জানান, অল্প পরিসরে অপরিকল্পিত ভাবে জাম চাষ হওয়ায় বাজারে জামের কদর রয়েছে। জামের অধিক সরবরাহ থাকলে এ কদর থাকবেনা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল লতিফ জানান, ঈশ্বরদীতে বিভিন্ন বাড়ির আঙিনায় প্রচুর জাম হয়। পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে সেই জাম বাজারে বিক্রি করে কৃষকেরা। তিনি জানান, চেষ্টা করা হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে জামের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও সংরক্ষন করার।
Leave a Reply