ঈশ্বরদী শহরের হান্নানের মোড়ে অবস্থিত সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক, নার্স ও ম্যানেজারের হঠকারিতায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে নিহতের পরিবারের সঙ্গে এক লাখ টাকায় রফাদফা হয়েছে। শনিবার ঈশ্বরদী পৌর এলাকার হান্নানের মোড়ে অবস্থিত সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক উজ্জ্বল হোসেন, ম্যানেজার আলতাফ হোসেন, নার্স শাহানাজ ও আরজিনা মিলে এক নারীর স্বাভাবিক প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) করার সময় টেনেহেঁচড়ে নবজাতককে বের করতে গিয়ে তাকে মেরে ফেলেন। এ ঘটনার পর পরই ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক, ম্যানেজার ও কথিত নার্স গা ঢাকা দিয়েছেন। গতকাল রবিবার সকালে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌরসভার আমবাগান ফেরদৌস কলোনি এলাকার ইমনের স্ত্রী স্মৃতির (২২) প্রসব বেদনা শুরু হলে শনিবার সকালে সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাম করে বাচ্চার অবস্থা দেখে সিজার করার পরামর্শ দেন ডায়াগনষ্টিক সেন্টার কর্তৃপ। এজন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসক আসার আগেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক, ম্যানেজার ও কথিত দুই নার্স ওই গৃহবধূকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। সেখানে তারা জোরপূর্বক টেনেহেঁচড়ে প্রসব করানোর চেষ্টাকালে নবজাতককে (মেয়ে) মেরে ফেলেন। টেনেহেঁচড়ে নবজাতককে বের করতে গিয়ে প্রসূতিও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার শরীরের কিছু অংশে কেটে-ছিঁড়ে যায় বলে একাধিক সুত্র জানায়। সূত্রটি আরও জানায়, ঘটনার পর সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপ ভুক্তভোগী পরিবারকে ঘটনা প্রকাশ না করতে বাধ্য করেন। এজন্য এক লাখ টাকায় আপোষ রফা করে ওই নবজাতকের লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৃহবধূর এক আত্মীয় বলেন, ওইদিন আল্ট্রাসনোগ্রামের চিকিৎসক জানান, গর্ভে বাচ্চার অবস্থান খুব ভালো ছিল। কিন্তু কিনিকের মালিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই জোরপূর্বক প্রসব করাতে গিয়ে সন্তানকে মেরে ফেলেছে।
এসব বিষয়ে সেবা কিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক উজ্জ্বল হোসেন এর সঙ্গে কথা বলতে ফোন করা হলে প্রতিবেদকে হাসপাতালে এসে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে সেখানে গিয়ে তাকে আর পাওয়া যায়নি।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এফ এ আসমা খাঁন জানান, লোক মুখে ঘটনা শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো হাসপাতালেই মাতৃ মৃত্যু কাম্য নয় বলেও জানান তিনি।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ আসেনি। তবে অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সুত্র জানায়, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বৈধ কোন অনুমোদন (লাইসেন্স) নেই। উপর মহলে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন থেকে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের সাথে চিকিৎসার নামে চরম ভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছেন। একটি সুত্র জানায়, ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোন রোগী অপারেশন করার সময় তার জন্য যেসব ঔষধ লিখা হয় তা গোপন করে পার্শ্ববর্তী এক উপজেলার হাসপাতালের পাচার করা ঔষধ কমদামে কিনে রাখা ঔষধ দিয়ে অপারেশন সম্পন্ন করেন। এখানেই শেষ নয়, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপারেশন থিয়েটারসহ সকল যন্ত্রপাতির মানই খুব নিম্নমানের। নার্স হিসেবে শাহানাজ ও আরজিনা নামের যাদের রাখা হয়েছে তারাও অনভিজ্ঞ। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন সনদ নেই। সুত্রটি আরও জানায়, প্রথম জীবনে উজ্জ্বল হোসেন ছিলেন একজন পশু চিকিৎসক। পরে তিনি সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক হন। বাহিরে তিনি রোগীসহ বিভিন্ন সেক্টর ম্যানেজ করেন। আর প্রতিষ্ঠানের ভেতর দেখাশোনা করেন তার স্ত্রী স্মৃতি খাতুন। এছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানে যে সমস্থ চিকিৎসক সেবা প্রদান করেন তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
Leave a Reply