ঈশ্বরদীতে সরকারী জমির বেশ কিছু অংশ দখল করে সুবিশাল অট্টালিকা (৫ তলা) নির্মান করেছেন প্রভাবশালী ও ধনার্ঢ্য ব্যবসায়ী ভুমিদস্যু মোঃ আনোয়ার হোসেন ফকির। শুধু ভবনই নয়, সেই জমিতে অবৈধভাবে মতার জোর খাটিয়ে নির্মান করেছেন দুই দুইটি সেফ্টি ট্যাংকি। এখানেই শেষ নয়; ভবনের সামনে মহাসড়ক সংলগ্ন সুবিশাল জায়গায় ইট বিছিয়ে তৈরি করেছেন গাড়ী পাকিং এর ব্যবস্থা। বন বিভাগের অনুমতি না নিয়েই নিজের সুবিধার জন্য কেটে সাবাড় করেছেন একটি বট গাছ। সর্বশেষ তিনি প্রায় ৫০ বছরের পুরাতন একটি রাস্তা বন্ধ করে নিজের আয়াত্বে নিয়ে সেটি নিজের মত করে ব্যবহার শুরু করেছেন। এতে প্রায় দেড়’শ পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র পথটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। এসব কারণে বিুদ্ধ এলাকাবাসী ােভে ফুঁসে উঠেছেন। প্রায় দুই শতাধিক এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে গণস্বার সম্বলিত অভিযোগপত্র ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করেছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পি এম ইমরুল কায়েস। সরেজমিন ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের নতুন হাট গোল চত্বরে গেলে এসব চিত্র দেখা যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী আনোয়ার হোসেন ফকির প্রথম জীবনে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। সেই সময় বিএনপি মতায় এলে তিনি নিজ বাড়ি সংলগ্ন বিন্দাবন দাসের বংশধরদের উচ্ছেদ করে তাদের জমি দখল করে নেয়। আনোয়ার ফকিরের সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্যাতন ও মামলায় জর্জরিত হয়ে নিজের জন্মস্থান নতুনহাট গোল চত্তর থেকে রাতের আঁধারে সাংবাদিক শ্রী অধির কুমার মন্ডলসহ বেশ কয়েকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে কোলকাতায় পালিয়ে যান। পরে তাঁদের অন্যান্য শরিকরা ভয়ে সেই জমি নামকাওয়াস্তে ভূমিদস্যু আনোয়ার ফকিরকে দলিল করে দিয়েছেন বলে প্রচার রয়েছে। তবে এই দলিলের সত্যতা সঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এসব বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নতুন হাট গোল চত্বরের পূর্ব দিকে মহাসড়কের সীমানা খুঁটির মধ্যেই সুবিশাল ভবন নির্মান করেছেন প্রভাবশালী আনোয়ার হোসেন ফকির। আর একে বারেই মহাসড়ক লাগোয়া জমিতে তৈরি করেছেন দুই দুটি সেফ্টি ট্যাংকি। নব-নির্মিত ভবনের সামনে দিয়ে পার্শ্ববর্তী মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়সহ প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন নিজের সুবিধার্তে। আর বন বিভাগের অনুমতি ছাড়ায় কেটে সাবাড় করেছেন বিশালাকৃতির একটি বট গাছ।
এলাকাবাসী গোলাম রসুল বলেন, আমাদের বাঁধা নিষেধ সত্বেও সরকারী জমিতে জোরপূর্বক ভাবে ভবন ও সেফ্টি ট্যাংকি নির্মান করেছেন প্রভাবশালী আনোয়ার ফকির। এছাড়াও তিনি পার্শ্ববর্তী মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটিও বন্ধ করে দিয়েছেন নিজের স্বার্থে। তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ অসহায়। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
প্রায় ২৫ বছর ধরে সরকারী ওই জমিতে ছোট্ট দোকান বসিয়ে ব্যবসা করে আসা আঃ মোমিম ও তার স্ত্রী ময়না খাতুনকে জোরপূর্বক সেখান থেকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছেন প্রভাবশালী আনোয়ার ফকির। মমিন ও ময়না খাতুন জানান, তারা প্রায় ২৫ বছর ধরে সেখানে ছোট্ট একটি ঘর তুলে ঝাল মুড়ি আর পিয়াজু বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি আনোয়ার ফকির তাদের সেখানে থেকে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একমাত্র উর্পাজনের জায়গা হারানোর শংকায় তারা এখন দিশেহারা।
চোখের সামনে প্রভাবশালী আনোয়ার হোসেন ফকিরের এতসব অন্যায় এর কোন প্রতিকার না হওয়ায় তীব্র নিন্দা আর ােভ প্রকাশ করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, উপর মহলে আনোয়ার ফকিরের হাত থাকায় সে এতবড় অন্যায় করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। তিনি অবিলম্বে সরকারী জমি দখল মুক্তসহ রাস্তা উদ্ধারের দাবি জানান।
সাহাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মতলেবুর রহমান মিনহাজ ফকির জানান, বিষয়টি তিনিও জানেন। সত্য ঘটনা তুলে ধরা সাংবাদিকদের নৈতিক দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারী সম্পত্তি যেই দখল করুক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ফকির বলেন, সরকারী জমিতে ট্যাংকি নির্মান করা যদি অন্যায় হয় তাহলে সরকার আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। রাস্তা বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আমার জমি ঘিরে রেখেছি, কারও রাস্তা বন্ধ করিনি। আর গাছ কাটার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, তিনি ইতিমধ্যেই সার্ভেয়ারকে জরিপ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply