করোনা ভাইরাসের হট স্পট খ্যাত ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গভীর রাতে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার পাবনা সিভিল সার্জন অফিসে পাঠিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আসমা খাঁন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে গেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের চরম তোপের মুখে পড়েন ডাঃ আসমা খাঁন।
এর আগে বুধবার দিবাগত গভীর রাতে তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার পাবনা সিভিল সার্জন অফিসে পাঠিয়ে দেন জানিয়ে আসমা খাঁন বলেন, পাবনায় স্বাস্থ্য সচিব স্যার আসবেন, এজন্য সিভিল সার্জন বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় তাকে ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়ার নির্দেশ দেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হাসপাতালে থাকা ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন তুহিনের দেওয়া ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে ১৭টি পাবনায় পাঠিয়ে দেন। এজন্য অবশ্য কারও সাথে তিনি বিষয়টি শেয়ার করেননি বলেও জানান। এদিকে বৃহস্পতিবার পাবনায় খোঁজ নিলে স্বাস্থ্য সচিবের আসার বিষয়টি কেউ জানেন না বলেও জানা গেছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেন সংকটের জন্য যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহুর্তে একজন ব্যবসায়ীর উপহার দেওয়া ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের মধ্যে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কাউকে না জানিয়ে গভীর রাতে পাবনায় পাঠিয়ে দেওয়াটা ঠিক হয়নি। তারা আরও জানান, নির্মানাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে হাজার হাজার রাশিয়ান নাগরিক নিয়োজিত। ঈশ্বরদী ইপিজেডে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মরত। গত কয়েকদিনে শত শত রাশিয়ান নাগরিক ও ইপিজেড শ্রমিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঈশ্বরদীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রূপপুর প্রকল্প ও ইপিজেডের কারণে ঈশ্বরদীতে হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে চরম উদ্বীগ্ন হয়ে তা নিয়ন্ত্রনে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় মাঠ প্রশাসন। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। বৃহস্পতিবারও ঈশ্বরদীতে ১৩৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে বলেও সুত্রে জানা গেছে। এদিকে চরম ঝুঁকিতে থাকা ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে ১৭ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার পাবনায় রাতের আঁধারে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় চরম ােভ প্রকাশ করেছেন পাবনা-৪ আসনের এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, উপজেলা চেয়ারম্যান নায়েব আলী বিশ্বাস ও পৌরসভার মেয়র মোঃ ইছাহক আলি মালিথা, ঈশ্বরদী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও ঈশ্বরদী প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ।
এসব বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তবে কাউকে কিছু না জানিয়ে ডাঃ আসমা খান গভীর রাতে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেন পাবনায় পাঠালেন এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। আর স্বাস্থ্য সচিবের আসার বিষয়টি তিনি জানেন না বলেও নিশ্চিত করেন।
যোগাযোগ করা হলে পাবনা সিভিল সার্জন ডাঃ মনিসর চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য সচিব পাবনায় আসবেন এজন্য ঈশ্বরদী থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসার ঘটনাটি সঠিক নয়। পাবনায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার গত মঙ্গলবার ২ দিনের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) আবার সেটি ঈশ্বরদীতে ফেরত পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাতের বেলায় কেন আনবো বা স্বাস্থ্য সচিব আসার সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সম্পর্ক্য কি? বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
উল্লেখ্য, ঈশ্বরদীর করোনা আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসার কথা বিবেচনা করে গত রবিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার উপহার হিসেবে প্রদান করেন আওয়ামীলীগ নেতা ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন তুহিন। সেই ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার এর মধ্য থেকে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার গোপনে পাবনায় পাঠিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আসমা খাঁন।
Leave a Reply