সর্বোস্ব খুইয়ে ঘুষের টাকা দিয়েও চাকরী না পেয়ে ঈশ্বরদীর ভাষা শহীদ বিদ্যা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক মুক্তার হোসেনের শাস্তি দাবীসহ টাকা ফেরত চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ প্রদানসহ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন ভুক্তভোগী রাজু আহমেদ ও এলাকাবাসী। আর সদয় অবগতিসহ পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ঈশ্বরদী শাখা বরাবর অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে চাকরী প্রত্যাশি ও ঘুষ প্রদানকারী রাজু আহমেদ লিখিতভাবে এই অভিযোগ ইউএনও কার্যালয়ে জমাদেন। পরে বিদ্যা নিকেতনের (উচ্চ বিদ্যালয়) সামনে গ্রামবাসীসহ মানববন্ধন করা হয়।
রাজুর লিখিত অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের চরমিরকামারিস্থ ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতন নামক উচ্চ বিদ্যালয়ে সৃষ্ট তিন পদে (নিরাপত্তা কর্মী, আয়া ও অফিস সহায়ক) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে চর মিরকামারি গ্রামের ছইম উদ্দিনের ছেলে রাজু আহমেদ নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ লাভের জন্য দরখাস্ত করেন। একই সঙ্গে নিয়োগ পাওয়ার আশায় গোপনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক মুক্তার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে রাজুর নিয়োগের আগে ৩ লাখ টাকা ও নিয়োগপত্র পাওয়ার পর আরো ২ লাখ টাকা প্রদানের চুক্তি হয়। সেই চুক্তিতে চাকরী প্রত্যাশি রাজু আহমেদ তাঁর শেষ সম্বল ভিটেবাড়ি বিক্রয় করে গত ২৫ আগষ্ট সন্ধ্যার পর ভাই জিয়াউল ইসলাম ও শহিদুল্লাহ সরদারকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান শিক্ষক মুক্তার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে ৩ লাখ টাকা প্রদান করেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্ধারিত (গত ২ সেপ্টেম্বর/২১) নিয়োগ পরীায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাও দেন রাজু। কিন্তু নিয়োগ কমিটি নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করেন। সেখানে প্রধান শিক্ষককে ঘুষ দিয়ে চাকরী প্রত্যাশিত রাজুর নাম নেই। এরপর ক্ষতিগ্রস্থ রাজু টাকা ফেরত চাইলেও প্রধান শিক্ষক কোন টাকা ফেরত দেননি।
চাকরী প্রত্যাশি রাজু আহমেদের ভাই জিয়াউল ইসলাম জানান, বেকার ছোট ভাইকে কর্মসংস্থান করার জন্য ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক মুক্তার হোসেনের দাবীকৃত ৫ লাখ টাকার মধ্যে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ কমিটিকে ম্যানজ করে রাজুকে নিয়োগ দিতে পারেনি প্রধান শিক্ষক মুক্তার। ঘুষ নেওয়া ৩ লাখ টাকাও ফেরত দেননি। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার নামে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এজন্য প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবী করছি।
মানববন্ধনে স্থানীয় নাজমুল হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষক মুক্তার হোসেন ইতিপুর্বে নিজেই ১৩ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়েছেন। সেই টাকা তুলতেই তিনি এই ধরণের প্রতারণা করেছেন। প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবী করে অভিযোগ প্রদান ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক সমিতি ঈম্বরদী শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রবি মুঠোফোনে জানান, প্রধান শিক্ষক মুক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরী প্রদান না করা ও টাকা ফেরত না দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে পদপে নেওয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার জানান, ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতনে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক মুক্তার হোসেন টাকা নিলে ব্যক্তিগত ভাবে নিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপরে নিকট প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতন পরিচালনা কমিটির সভাপতি শহীদ হাসান লিন এর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কয়েকবার রিং দিয়ে ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক মুক্তার হোসেন মুঠোফোনে জানান, নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়ার নামে রাজু আহমেদের নিকট থেকে কোন টাকা তিনি নেননি। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তবে ইতিপুর্বে নিজে ১৩ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে প্রধান শিক্ষক হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মুক্তার হোসেন জানান, অতিত নিয়ে কোন কথা নয়, আমরা বর্তমান নিয়ে থাকি বলে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
Leave a Reply