দীর্ঘ ৫ বছর পর সম্মেলন না করে আকষ্মিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ঈশ্বরদী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফেসবুকে ঘোষিত পকেট কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের মাধ্যমে ত্যাগী ও পরিশ্রমিদের ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত করার দাবীতে সাংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ পথসভা ও প্রধান সড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন ধরিয়ে অবরোধ কর্মসূচী পালন করা হয়। এই সময় শহরের প্রধান ব্যস্ততম সড়কের দুই পাশে কয়েকশত ছোটবড় যানবাহন আটকে পড়ে শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। আর পুলিশ অবরোধ তুলে শহরে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। বুধবার দুপুরে ঈশ্বরদী আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূল ছাত্রলীগের ব্যানারে একাংশের কয়েকশত ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এসব কর্মসূচি পালন করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ উল্লেখ্য করে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ আলী ও সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম স্বারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে মল্লিক মিলন মাহমুদকে সভাপতি, খন্দকার আরমানকে সাধারণ সম্পাদক ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটিতে আবির হোসেন শৈশবকে সভাপতি ও মারুফ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
বুধবার বেলা ১২টার কিছু সময় পরে ঈশ্বরদী আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পৌর ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শাওন বলেন, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ একটি পরে নিকট থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে সম্মেলন না করে এবং স্থানীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নায়েব আলী বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র ইছাহক আলী মালিথাসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের না জানিয়ে গোপনে ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেছেন। কমিটিতে যাদের সভাপতি ও সম্পাদক বানানো হয়েছে তাদের একজন স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের নাতি, আরেকজন বিএনপির ওয়ার্ড ছাত্রদলের নেতা, একজন মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী এবং অপরজন বিবাহিত। তাই এসব বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবী জানানো হয়।
এসব কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ নেতা আশিক হায়দার বিশাল, বুলবুল আহমেদ খান, জিসান হোসাইন, সাফিন অরণ্য, রিদয় হোসেন, মহিন ইসলাম আকাশ, শ্রী অনিক চৌধুরী, রাকিবুল হাসান রাব্বিসহ কয়েকশত ছাত্রলীগ কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ নায়েব আলী বিশ্বাস বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি এভাবে কখনোই হতে পারে না। এটা ছাত্রলীগের ইতিহাসকে কলংকিত করেছে। ঘোষিত কমিটি বাতিল করে পাবনায় বসে নয় সম্মেলনের মাধ্যমেই ঈশ্বরদীতে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হবে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগসহ সহযোগি সংগঠনের মধ্যে কোন ষড়যন্ত্র ঢুকতে দেওয়া হবে না।
পাবনা জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ আলী জানান, ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় ছাত্রলীগের কর্মকান্ড ব্যবহৃত হচ্ছিল। তাই সাংগঠনিক বিধিমোতাবেক সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই বৈধভাবে কমিটি দুটির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনার মহামারি ও মাহে রমজানের কারণে সম্মেলন না করে ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে বেগবান রাখতে আগামী এক বছরের জন্য এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, কমিটিতে যাদের সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তাদের বাদে অন্য কারও নাম ঘোষণা করা হলেও ঈশ্বরদীতে একই ঘটনা ঘটতো। তবে টাকা নিয়ে পকেট কমিটি ঘোষণার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের এই নেতা।
এদিকে ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের ঘোষিত পকেট কমিটি বাতিলসহ কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি না করা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ মিছিল, পথসভা, সড়ক অবরোধসহ সকল ধরণের কর্মসূচি অব্যহৃত রাখা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়।
Leave a Reply