ঈশ্বরদীতে নির্মানাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন (রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেল) কাজ শুরু হচ্ছে বুধবার। একে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হৃৎপিন্ড বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করবেন। রূপপুরের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, রাশিয়ার পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সান্ডার লেখসেভ উপস্থিত থাকবেন বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা জানান, নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে।
এদিকে প্রেসার ভেসেল স্থাপন কাজের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। গত মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সকালে রূপপুর প্রকল্প মনিটরিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মনিটরিং কমিটির সভাপতি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফর উল্লাহ। সভায় ১৯ অক্টোবর কর্মসূচি বাস্তবায়নে করণীয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন শুরু হচ্ছে। যা পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি বড় অর্জন বলে মনে করছেন রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার প্রকল্প এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন কার্যক্রমকে ঘিরে প্রকল্প এলাকায় শেষ মুহুর্তে সাজসজ্জার কাজ চলছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বড় বড় বিলবোর্ড প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রায় পাঁচ শতাধিক দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, ‘২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের চুল্লি পাত্র স্থাপনের কাজের উদ্বোধন হয়। ইতিমধ্যে প্রথম ইউনিটের কাজের ৭০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যেই দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।’ নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করায় প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে আশা করেন তিনি। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ সময় অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষের দিকে প্রথম ইউনিটে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের পরিক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প সুত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক (থ্রি প্লাস জেনারেশন) ‘ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির পরামণু চুল্লি ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি চুল্লি স্থাপন করা হবে রূপপুরে। ২০২৩ সালে এ প্রকল্পের প্রথমটি এবং পরের বছর দ্বিতীয় চুল্লিটি চালু হওয়ার কথা। দুই ইউনিটের এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটম। আর ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। বাস্তবায়ন ব্যয় বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদি এবং গ্যাস, তেল ও কয়লার মতো জ্বালানি খরচ না থাকায় তুলনামূলক সস্তা হবে এই বিদ্যুৎ। এ প্রকল্পের ‘লাইফ’ বা জীবনীশক্তি হবে ৫০ বছর। আর তা সংস্কার করলে দাঁড়াবে ৮০ বছর।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হলেই উৎপাদন শুরু করা যাবে না। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন শুরু করতে প্রকল্প এলাকার আনুষঙ্গিক সব ধরনের নির্মাণ কাজ শেষ হতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত মূল প্রকল্পের বাইরের অন্যন্য অবকাঠামোগত নির্মাণ শেষ হওয়া এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়ম ও আইন মেনে উৎপাদনে যেতে হয় ফলে উৎপাদন শুরু হওয়ার সঙ্গে প্রতিটি বিষয় সম্পর্কিত।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ ভৌত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং আর্থিক আগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করে উৎপাদন শুরুর ব্যাপারে আশাবাদি তিনি।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়ার অর্থায়ন, ডিজাইন ও কারিগরি সহায়তায় ভিভিআর-১২০০ মডেলের দুটি পারমানবিক চুল্লি স্থাপন করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে।
Leave a Reply