ঈশ্বরদীর জয়নগরে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে মদ ও নারী ব্যবসা বন্ধসহ রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী খায়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে বসতবাড়ি ও কবরস্থান দখল, বিভিন্ন ফলজ গাছ কাটা ও জমি দখলের অভিযোগে বিশাল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই রিসোর্টের সামনে ও বোর্ড অফিস মোড়ে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন ফেস্টুন, প্লাকার্ড নিয়ে শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মানববন্ধন থেকে বক্তরা বলেন, ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে প্রতিনিয়ত মদ, নারী ও মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তিদের অসামাজিক কার্যকলাপ ও উচ্চ শব্দের ডিজে পার্টির কারণে এলাকার পরিবেশ চরমভাবে নষ্ট হচ্ছে। রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত দেশী-বিদেশী নাগরিক, শিক্ষার্থী ও উচ্চ বিত্তের তরুণ-তরুণীরা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের খপ্পরে পরে বিপুল অঙ্কের টাকা খোয়ানোর ঘটনা এখন নিত্যদিনের। এই রিসোর্টির মালিক খায়রুল জামায়াত-বিএনপির একজন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। বর্তমানে তিনি ভোল (ভূমিকা) পাল্টিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন। বিগত জোট সরকারের সময় তার ভুমিকা কি ছিল তা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেন বক্তারা’।
মানববন্ধনে সলিল মোল্লা, ফেলু মোল্লা ও মতিয়ার মোল্লা বলেন, এলাকার মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে খায়রুল ইসলাম চাউলের কমিশনে ব্যবসা করার সুবাদে ২০১৫ সালের দিকে সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন (জয়নগর বোর্ডঘর) আবাসিক এলাকায় একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। নিচ তলায় গোডাউন আর উপর তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু পরে সেই বাড়িটিকে স্বপ্নদ্বীপ নাম দিয়ে রিসোর্ট করেছেন। সেখানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের আসা যাওয়াকে কেন্দ্র করে মদ ও নারীর ব্যবসা শুরু করেন। তারা আরও বলেন, খায়রুল ইসলামের স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের আসা যাওয়ার সুবাদে তিনি এসব অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হলে খায়রুলের নিজস্ব বাহিনী ছাড়াও প্রশাসনের ভয়ভীতি দেখান।
তারা আরও বলেন, স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের দুই পাশে দুটি মসজিদ ও একটি কওমিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়া কয়েক হাজার লোকের বসবাস। কিন্তু রিসোর্টে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ আওয়াজে ডিজে পার্টি চলে। মদ্যপ অবস্থায় বিদেশী নাগরিকসহ স্থানীয় যুবকরা মাতলামি করেন। রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে না। ধর্মপ্রাণ মানুষের নামায আদায় ও হাফেজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা দানে ব্যহৃত হচ্ছে। আবাসিক এলাকায় এসব অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।
স্থানীয় এলাকাবাসী হাবিবুর রহমান, রবি, সাথী, সেলিনা বেগম বেগম বলেন, খায়রুল ইসলাম অবৈধভাবে তাদের জমি বেড়া দিয়ে ঘিরে দখল করে নিয়েছে। তাদের লিছু, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরণের ফলজ ও বনজ গাছের গোড়াই নোংরা পানির নালা কেটে মেরে ফেলেছে। বাধ্য হয়ে জমি ৪৪ লাখ টাকা দরে বিক্রয় করতে রাজি হয়েছি। বায়নামা করে মাত্র ৫ লাখ টাকা দিয়েই সেখানে ৫ তলা ভবণ নির্মাণ করেছেন। কয়েক বছর পার হলেও বাকি টাকা দেয়নি। আকাল উদ্দিন, রবিউল প্রাং, অমল কুমার সরকার, স্বরসতি কুমারী বলেন, খায়রুল ইসলাম স্থানীয় এমপির বোনের জমিসহ তাদের ৬০ বাড়ির জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খায়রুল ইসলাম প্রথমে তাদের জমিতে নোংরা পানির নালা করে সমস্ত ফলজ ও বনজ গাছ মেরে ফেলেছে। গত বুধবার সকালে খায়রুল ইসলাম লোকজন দিয়ে আমাদের পারিবারিক গোরস্থানের জায়গা দখলে বাবা, মা, চাচা, দাদা, দাদীসহ আত্মীয়স্বজনদের হাড় কবর থেকে তুলে ফেলার চেষ্টা করেন। এই সময় আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বিশ্ববিদালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মা ছালমা খাতুনসহ পরিবারের মেয়েরা এগিয়ে আসে। তখন খায়রুলের সন্ত্রাসী বাহিনী মাহিলাদের গলায় ধারালো হাসুয়া ধরে গলা কেটে হত্যার হুমকি দেয়। ভয়ে মেয়েরা দৌড়ে বাড়িতে চলে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খায়রুল ইসলাম স্বপ্ন রিসোর্টে রূপপুর প্রকল্পের রাশিয়ানদের পাসপোর্ট ব্যবহার করে কয়েক কোটি টাকার মদ নিয়ে আসেন। এখানে রাশিয়ানদের জন্য মনোরঞ্জনের জন্য স্থানীয়সহ কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকা বাঙ্গালি মেয়েদের নিয়ে আসেন। বর্তমানে এলাকার ৫টি মেয়ে এই রিসোর্টে নিয়মিত মনোরঞ্জনের কাজে যুক্ত রয়েছেন। এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেরা রিসোর্টের নিয়মিত খদ্দের। আগামী ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষ্যে কয়েক কোটি টাকার মদের আয়োজন করেছেন। সঙ্গীত শিল্পী গান গায়তে আগামী ১ জানুয়ারি/২৩ স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে আসছেন। এই জন্য রিসোর্টের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালনা করা হচ্ছে।
প্রশাসনের একাধিক সুত্র জানায়, খায়রুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। সেই সখ্যতায় তারা মাঝে মধ্যেই খায়রুলের স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে রাত্রিযাপনসহ আসা যাওয়া করেন। একই সঙ্গে অবৈধভাবে রাশিয়ানদের পাসপোর্ট ব্যবহার মদ আমদানী করায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে রিসোর্টের নামে হাজ্বি খায়রুল ইসলাম যা করছেন তা খুবই নোংরা বলেও সুত্রগুলো দাবী করেন।
অনুষ্ঠিত কর্মসূচীতে সলিমপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নায়েক (অবঃ) এম এ কাদের, ভুক্তভোগী মতিয়ার মোল্লা, ছলিম প্রামাণিক, আব্দুল মজিদ, আয়শা আক্তার, আফরোজা খাতুন, বন্যাসহ স্থানীয় বিপুলসংখ্যক গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘স্বার্থ হাসিলের জন্য মিথ্যা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করছে একটি স্বার্থন্বেষী মহল।’
Leave a Reply