পাবনার ঈশ্বরদীতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দুই কৃষকের প্রায় ২ হাজার ফলন্ত কলার গাছ সন্ত্রাসী কায়দায় কেটে ফেলে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। শনিবার দিবাগত রাতে ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়ের রূপচর কনিকা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল রোববার সকালে ক্ষতিগ্রস্থ দুই কলাচাষী আমিরুল বিশ্বাস ও মোঃ আব্দুস সামাদ বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগে দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা জানান, তারা পদ্মার চরে নিজস্ব জমিতে দীর্ঘদিন ধরে কলার আবাদ করে আসছেন। একই গ্রামের মোঃ খায়রুল ইসলাম ও মোঃ নবাব আলীর সঙ্গে তাদের জমি-জমার আবাদ নিয়ে পূর্বশত্রুতা ছিল। সেই শত্রুতার জের ধরে তারা ১০/১২ জন লোক নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় প্রায় ২ হাজার ফলন্ত কলার গাছ কেটে দিয়েছে। লোকমুখে খবর পেয়ে আমরা কলা বাগানে গেলে তারা হাসুয়া হাতে আমাদের তেড়ে মারতে উদ্যত হয়। সে সময় আমরা দৌড়ে পালিয়ে এসে ঈশ্বরদী থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করি।
গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, শত শত কাটা ফলন্ত কলার গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আমিরুল বিশ্বাস ও মোঃ আব্দুস সামাদ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একই এলাকার রানা বিশ্বাস, আব্দুর রহমানসহ আরো কয়েকজন জানান, কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই খায়রুল ও নবাব আলী ১০-১২ জন লোককে সঙ্গে নিয়ে এসে কলাগাছগুলি নির্দয়ভাবে কেটে ফেলেছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, পাকশী ইউনিয়নের চররূপপুর গ্রামের রূপচরের কনিকা মৌজায় প্রায় ৬ বিঘা জমিতে দীর্ঘদিন থেকে কলার আবাদ করে আসছেন। এ জমিতে প্রায় ২ হাজার কলার গাছ রোপন করা হয়েছে। বেশ পরিপক্ক হয়ে উঠেছিল গাছগুলি। কোনো কোনো গাছে কলাও ধরেছে। এ অবস্থায় পূর্ব শুত্রুতার জেরে গত শনিবার রাতে একই এলাকার খায়রুল ইসলাম ও নবাবসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জন ওই জমিতে গিয়ে ধারালো হাসুয়া দিয়ে সব কলাগাছ কেটে ফেলে। গাছ কাটার খবর পেয়ে আমিসহ আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশিরা সেখানে গেলে তারা আমাদের উপর চড়াও হয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এমনিক মেরে ফেলারও হুমকি দেয় তারা। তিনি আরও বলেন, অনেক কষ্ট আর টাকা খরচ করে কলাগাছগুলো পরিচর্যা করে পরিপক্ক করেছিলাম। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই তাঁরা আমার সর্বনাশ করে ফেলেছে। গাছ কেটে ফেলায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আমিরুল ইসলাম।
এলাকাবাসী দুলাল বিশ্বাস বলেন, এটা অমানবিক ও চরম অন্যায় কাজ। কলাগাছ কেটে ফেলার কারণে কৃষকের অনেক ক্ষতি হলো। এ ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। এই গাছ কাটার সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে অভিযুক্ত খায়রুল ইসলাম বলেন, এই জমি আগে আমি চাষ করতাম। দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় আমিরুল ইসলামের কাছে ওই জমি বর্গা দিয়ে যায়। দেশে চলে আসায় জমি ফেরত চাইলে আমিরুল ইসলাম তা দিতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, জমি ফেরত চাওয়ায় তিনি নিজেই গাছ কেটে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার দিন আমি এলাকায় ছিলাম না, ঢাকায় ছিলাম।
ঈশ্বরদী থানর ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, ইতোমধ্যে পুলিশ ও সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।
Leave a Reply