ভাষার মাসে পাবনার ঈশ্বরদীতে ভাষা সৈনিক মাহাবুব আহমেদ খাঁন স্মৃতি মঞ্চসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেল কর্তৃপক্ষ। কোন প্রকার অগ্রিম নোটিশ ছাড়াই গতকাল বুধবার দুপুরে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কার্যালয়ের উদ্যোগে ঈশ্বরদী শহরের বাজার এলাকায় রেলের জায়গায় নির্মিত ভাষা সৈনিক মাহাবুব আহমেদ খাঁন স্মৃতি মঞ্চ, গণশৌচাগার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ১৬টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। রেলওয়ের প্রয়োজনে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও যাত্রী সেবা নিশ্চিত করার জন্য এসব স্থাপনা ভাংচুর ও অপসারণ করা হচ্ছে বলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ ও পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ নুরুজ্জামান। ভাষার মাসেই ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মাহবুব আহমেদ খানের নামে নামকরণকৃত অর্ধশত বছরের স্মৃতি বিজোরিত ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি মঞ্চ ভেঙ্গে দেওয়ায় ঈশ্বরদী জুড়ে তীব্র ক্ষোভ আর নিন্দার ঝড় উঠেছে।
পাকশী বিভাগীয় এস্টেট অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নুরুজ্জামান জানান, রেলওয়ের প্রয়োজনে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও যাত্রী সেবা নিশ্চিত করার জন্য এসব স্থাপনা ভাংচুর ও অপসারণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঈশ্বরদী রেলওয়ে বুকিং অফিস চত্বরে অপসারণকৃত দোকানের মালিকরা হয়তো অন্য কোথাও তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য দোকান নির্মান অথবা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু ঈশ্বরদীর সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সহ সর্বস্তরের সাংগঠনিক অনুষ্ঠানাদী করার জন্য মাহবুব আহমেদ খান স্মৃতি মঞ্চের মতো আরেকটি মঞ্চ সহসাই পাবে বলে মনে হয় না। এজন্য ঈশ্বরদীর সর্বস্তরের সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক মঞ্চটি রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা দরকার ছিল।
বহু কারণে ঐতিহ্যবাহী ঈশ্বরদী শহরের প্রানকেন্দ্র রেলওয়ে বুকিং কাউন্টারের পাশে অবস্থিত ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মাহবুব আহমেদ খান স্মৃতি মঞ্চের সামনের চত্বরটি। এখানে বাংলাদেশের অনেক শীর্ষ নেতা সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন। শহরের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই মঞ্চ ও চত্বরটিই ছিল সম্বল। এখানে সব ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। হাজারো মানুষ তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতেন। এই নামেই একটি আধুনিক চত্বর গড়ে তোলার কথা বলেন বিভিন্ন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ কিরণ বলেন, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মাহবুব আহমেদ খান স্মৃতি মঞ্চ ঈশ্বরদীর একটি ঐতিহ্যবাহী একমাত্র উন্মুক্ত মঞ্চ। কোন ধরণের আগাম নোটিশ না দিয়ে ভেঙ্গে ফেলাটা দুঃখজনক। অবিলম্বে এটি আধুনিকভাবে স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নায়েব আলী বিশ্বাস বলেন, এ মঞ্চের সামনেই রেলওয়ে টিকিট কাউন্টারে প্রথম উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এই মঞ্চের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঈশ্বরদীর রাজনীতির নানান স্মৃতি। দলীয় বড় বড় জনসভার পাশাপাশি এখানে সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান হয়। এ মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলা হবে এটিতো আগে শুনিনি। এ ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
Leave a Reply