বোনের বাড়ি অবৈধভাবে নিজের দখলে নিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, বাড়ির বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বড় ভাই। একই সঙ্গে বোনের স্বামী রাশেদ-উশ-শানকে পিটিয়ে আহতসহ হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। গত ২০ দিন ধরে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে বাড়িটির ভাড়াটিয়া। অবৈধভাবে বাড়ি ও জমি দখল প্রতিরোধসহ বাড়ির পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবীতে অবৈধ দখলদার বড় ভাই আবুল তালহা বিটনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পাবনা ঈশ^রদী শহরের শেরশাহ্ রোডস্থ নিজ বাড়িতে জনকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ভূক্তভোগি রুমানা ইসলাম সানির স্বামী রাশেদ-উশ-শান।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ-উশ-শান জানান, বাবা নুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর ওয়ারিশগণ বাড়িসহ জমি বিক্রয়ের ঘোষণা দেন। তখন পারিবারিক সিদ্ধান্তে ২০১৬ সালে তিনি শ^শুড়ের বাড়িসহ জমি স্ত্রীর এক ভাই ও দুইবোনের নিকট থেকে ক্রয় করেন। তিনি ব্যবসা জনিত কারণে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। এইজন্য বাড়িসহ জমি দেখাশোনার করার জন্য স্ত্রীর অপর ভাই আবু তালহা বিটনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিটন পরিবার নিয়ে বাড়ির দো-তলায় বাস করেন। আর নিচের অংশসহ জমির অন্য অংশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা করছেন। বিগত সাড়ে ৪ বছরে আনুমানিক ৪২ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করে আত্মসাত করেন বিটন। টাকার হিসাব চাওয়ার পর থেকেই বিটন ও তার স্ত্রী তাদের সঙ্গে অশালিন আচরণ শুরু করেন। এরপর করোনা মহামারির পর ২০২১ সালে স্ত্রী রুমানা ইসলাম সানি ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঢাকা থেকে ঈশ^রদীর বাড়িতে আসেন। কিন্তু বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আবু তালহা বিটন বাড়িটি নিজের বলে দাবী করেন। এক পর্যায় বিটন ও তার স্ত্রী পপি তাদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ বাধিয়ে দেন। প্রাণনাশসহ নানা রকম হুমকি-ধামকি প্রদান করায় নিজের বাড়িতে উঠতে না পেরে শহরের পশ্চিম টেংরী বাবুপাড়ায় বাসা ভাড়া নেন।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ আরও জানান, বাড়ি ও জমি দখল ও সীমানা প্রাচীর নির্ধারনের জন্য কয়েক দফা ঈশ^রদী পৌরসভায় আবেদন করা হয়। জমি পরিমাপের সময় আবু তালহা বিটন কৌশলে অনুপস্থিত থাকেন। অবশেষে পৌরসভায় পূনঃ আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২২/৮/২০২৩ পৌর সভার শালিস বোর্ড মেয়রের আদেশে প্যানেল মেয়র আবুল হাশেম, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিল মোঃ আব্দুল লতিফ মিন্টুসহ অন্যান্য কাউন্সিলর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিতিতে জমিটি পরিমাপ করেন। সেখানে ক্রয়কৃত জমির দলিল দেখে শালিস বোর্ড জমির সীমানা নির্ধারণ করে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এরপর বাড়িটির নিচ তলায় সবজু এক্সেসরিজ লিঃ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীক অফিস খোলা হয়। একই সঙ্গে বাড়িটি দেখাশোনার জন্য বাপ্পি নামের একজনকে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে দেওয়া হয়। আর মানবিক কারণে আবু তালহা বিটনকে বাড়ির উপর তলায় থাকতে দেওয়া হয়। সম্প্রতি তার অনুপস্থিতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবুজ এক্সেসরিজ কার্যালয়ে আবু তালহা বিটন হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে ও প্রতিষ্ঠানের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। একই সঙ্গে বাসায় থাকা বাপ্পির নিকট চাঁদা দাবী করে ও হুমকি প্রদান করেন। একই সঙ্গে বাড়ির পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিষয়টি জানার পর গত এক সপ্তাহ আগে তিনি খবর পেয়ে ঢাকা থেকে ঈশ^রদীতে আসেন। বিষয়টি জানার জন্য বাসায় যান। তখন আবু তালহা বিটন ও তার স্ত্রী তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সন্ধ্যায় আবু তালহা বিটন ও তার শ^শুড় বাড়ির লোকজন এবং বিটনের ভাড়া করা চিহিৃত সন্ত্রাসীরা পশ্চিম টেংরীর ভাড়াকৃত বাসায় গিয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পা ভেঙ্গে ফেলাসহ হত্যার হুমকি প্রদান করে। এই বিষয়ে ঈশ^রদী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু ২০ দিন ধরে বাড়িটি পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসহীন অবস্থায় রয়েছে। বাসার লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছে। এখন বাড়ি ও জমি দখল নেওয়ার অপচেষ্টা করছে ও তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রাশেদ।
এই ব্যাপারে আবু তালহা বিটন জানান, জমিতে আমার অংশ রয়েছে। পারিবারিক সিদ্ধান্তে বাড়ি ও জমি বিক্রয়ের বিরুদ্ধে আদালতে বাটোয়ারা মামলা চলমান রয়েছে। বিটন আরও জানান, বিষয়টি পাবনার আওয়ামীলীগ নেতা কামিল হোসেন আংকেল দেখভাল করছেন। তিনি যেভাবে বলবেন সেই ভাবেই কাজ করা হবে।
Leave a Reply