ঈশ্বরদীতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের এবং একটি বিরোধ মিমাংশার বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের স্বশস্ত্র হামলায় নিহত যুবলীগ নেতা খাইরুল ইসলাম (৪২) হত্যার বিচার এবং খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১ টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ্ব মোড় এলাকায় এসব কর্মসূচী পালন করা হয়। অনুষ্ঠিত এসব কর্মসূচীতে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজারো নারী-পুরুষ শতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণ করে বিক্ষোভে ফেঁটে পড়েন। সে সময় তারা ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি ও সমাজ সেবক খায়রুল ইসলাম হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসির দাবিতে আর্তনাত-আহাজারি সহ বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
চরগড়গড়ী আলহাজ্ব মোড় এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগণের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলটি আলহাজ্ব মোড় পশ্চিম পাড়া থেকে শুরু হয়ে এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চরগড়গড়ী আলহাজ্ব মোড়ে এসব কর্মসূচী পালন করা হয়। হত্যার বিচার দাবিতে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত যুবলীগ নেতা খায়রুল ইসলামের ছেলে সাইদুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এলাকার বিরোধ মিমাংশার একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গত ১৯ এপ্রিল তার পিতা খায়রুল ইসলামকে প্রকাশ্যে স্থানীয় বিএনপি’র নেতা মকলেছুর রহমান মজনু’র নেতৃত্বে রেজাউল ইসলাম, আব্দুল হামিদ দুলাল, খোকন, নুরুল ইসলাম, সেলিম ও মিঠনসহ অনেকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। তিনি এই হত্যার বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন সাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মিলন প্রাং, চরগড়গড়ী আলহাজ্ব মোড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইসাহক আলী, আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রশিদ প্রাং, নিহতের ভাই আনারুল ইসলাম, ডাঃ মিনারুল ইসলাম, ৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু প্রাং, ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি আসলাম শেখ, সমাজ সেবক আব্দুর রউফ, কাশেম সরদার ও সাইদুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল ঈশ্বরদী শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ্ব মোড় এলাকায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের এবং একটি বিরোধ মিমাংশার বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের স্বশস্ত্র হামলায় ৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি খাইরুল ইসলাম (৪২) নিহত হয়। নিহত খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ্ব মোড় পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত নসিম প্রামাণিকের ছেলে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই আনারুল ইসলাম বাদী হয়ে ২৪ জনকে নামীয় সহ অজ্ঞাতনামা আরও বেশ কয়েকজনকে আসামী করে গত ২০ এপ্রিল ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত ৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন লুৎফর রহমানের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪৫), হুজুর আলীর ছেলে আনারুল ইসলাম (৩৫), আফিল উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০) ও নবাব আলীর ছেলে রুবেল (৩০)।
স্থানীয়রা জানান, আহতদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের ঈশ্বরদী, পাবনা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, বেশ কয়েকদিন আগে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে চরগড়গড়ী আলহাজ্ব মোড়ের হুজুর আলী মন্ডল এবং মজনু গ্র“পের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মারামারি হয়। সেই ঘটনায় গত দুই দিনে উভয় গ্র“পের মধ্যে আবারও ছোটো খাটো মারামারির ঘটনা ঘটে। এসব বিষয়ে স্থানীয় গ্রাম্য প্রধান ও ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম উদ্যোগ নিয়ে গত ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় উভয় পক্ষকে একত্রে বসিয়ে মারামারির বিষয়টি মিমাংশা করে দেন।
শুক্রবার বিকালে হুজুর আলী গ্র“পের জামাত ফকির অপর পক্ষ মজনু গ্র“পের এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় মজনু গ্র“পের সদস্যরা তাকে এলোপাথারী মারপিট করে গুরুতর আহত করে ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়। এই ঘটনায় হুজুর আলী গ্র“পের সদস্যরা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন লাঠিসোটা নিয়ে এগিয়ে এলে উভয় গ্র“পের মধ্যে মারামারি ও সংঘর্ষ বেঁধে যায়। খবর পেয়ে গ্রাম্য প্রধান ও যুবলীগ নেতা খায়রুল ইসলাম এগিয়ে এসে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করলে মজনু গ্র“পের সদস্যদের দেশীয় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে খায়রুল। সে সময় গুরুতর আহত খাইরুলকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে, ৪ জন আসামীও গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতারে এলাকায় পুলিশ পাহাড়াসহ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন বিষয়ে ওসি বলেন, সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্থরা শান্তিপূর্ণ যেকোন কর্মসূচী পালন করতেই পারে। সেখানে আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বিশেষ ভূমিকায় ছিল বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply