ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীতে পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলার এসিল্যান্ডের অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনকারী ৩টি ড্রেজার, বালু ভর্তি ২টি বড় নৌকা জব্দসহ ৪ শ্রমিককে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ড দেওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ সহ প্রতিবাদ জানিয়েছেন বালু ব্যবসায়ীরা। শনিবার বিকালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ১নং সাঁড়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীর সাঁড়া ঘাট এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবাদ জানান সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত বালু উত্তোলনকারী মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজে স্বত্বাধিকারী মোঃ সুলতান আলী বিশ্বাস টনি।
অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে টনি বিশ্বাস বলেন, আমি সরকারের নিকট থেকে বৈধভাবে ইজারা নিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া মৌজায় পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করে আসছি। শুক্রবার দুুপুরে লালপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আজিজুল কবির ঈশ্বরদী উপজেলায় অনধিকার প্রবেশ করে অবৈধভাবে আমার লোকজনকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে কারাদন্ড দিয়েছেন। এছাড়াও বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার ও নৌকা থেকে সেলফ, ব্যাটারি, টুল বক্স, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, টর্চ লাইট ও নগদ টাকা নিয়ে গেছেন। টনি বিশ্বাস অভিযোগ করেন, অভিযান পরিচালনায় করলেও অজ্ঞাত কারনে তিনি এগুলোর জব্দ তালিকার রশিদও দেননি আমাদের, যা অন্যায়। বিষয়টি আমি ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পাবনা জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি এবং ঈশ্বরদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছি। এখন ন্যায় বিচার পাওয়ার স্বার্থে সাংবাদিক ভাইদের সামনে দ্বারস্থ হয়েছি। অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ওই এলাকার শতাধিক বালু ব্যবসায়ী ও নৌকার মালিক মাঝিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে লালপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ আজিজুল কবির সেনা সদস্যদের সাথে নিয়ে পদ্মানদীর ঈশ্বরদী বালু মহালে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার ও নৌকা জব্দ করা সহ ৪ জনকে আটক করেন। আটককৃতরা হলেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার মুন্ডুমালা গ্রামের রুস্তম খাঁ’র ছেলে রাকিবুল খাঁ (২২) ও রবিউল (৩০), সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বিদকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে খোকন (৩৫), একই উপজেলার ফিয়াদকান্দি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে শাহামুদ্দিন (১৯)।
বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার শ্রমিক আব্দুস সালাম বলেন, আমরা ঈশ্বরদীর সীমানায় টনি বিশ্বাসের বৈধ চর থেকে বালু উত্তোলন করছিলাম। এই সময় সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য আমাদের আটক করে সাঁড়াঘাটে নিয়ে আসেন। এরপর তারা ড্রেজারের ২টি ব্যাটারি, দুটি সেলফ, টার্স মোবাইলসহ নগদ টাকা নিয়ে যান। ব্যাটারি ও সেলফবিহীন ড্রেজারটি তারা সাঁড়াঘাটে ফেলে রেখে গেছেন বলেও জানান তারা।
পদ্মা নদীর সাঁড়া ঘাটের তরিমহাল ইজারাদার মোঃ মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ্য অন্যায় ভাবে লালপুরের এসিল্যান্ড সাহেব ঈশ্বরদীর সীমানায় অভিযান পরিচালনা করেছেন। এতে করে এই এলাকার বালু ব্যবসায়ী ও নৌকার মাঝিদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর সচিক বিচার দাবী করেন তিনি।
এবিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ সাংবাদিকদের জানান, বালু মহালে অভিযান পরিচালনা করা নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু এক জেলার থেকে অন্য জেলায় অভিযান চালাতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ অভিযান চালাতে হয়। কিন্তু লালপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজিজুল কবির আমাদের সাথে কোনরূপ আলোচনা না করে আইন ভঙ্গ করে ঈশ্বরদী সীমানায় অভিযান চালিয়ে লোকজনকে আটকসহ ড্রেজার ও নৌকা জব্দ করেছেন। এটা খুবই অন্যায় করেছেন। বিষয়টি আমি পাবনা জেলা প্রশাসককের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে নাটোর জেলা প্রশাসক ও লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যবহৃত সরকারী মোবাইল নম্বরে নিয়ম মেনে অনেকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। তবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী লালপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজিজুল কবির সাংবাদিকদের জানান, আমরা ঈশ্বরদীর সীমানায় অভিযান চালাইনি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের আটক করতে আমাদের একটি আভিযানিকদল শুধুমাত্র ঈশ্বরদীর সাঁড়াঘাট ব্যবহার করেছে। বিষয়টি পরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আটককৃতরা অবৈধভাবে পদ্মানদীর বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলনসহ সরবরাহ কাজে জড়িত ছিলেন। তাদের তিনজনকে এক মাসের ও একজনকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম শহীদ জানান, ক্ষতিগ্রস্থরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ইউএনও স্যারের সাথে সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় পাবনা ও নাটোর জেলা প্রশাসনের মধ্যে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply