আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ্ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ১৯৬৭ সালে আমি যখন চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপিঠ হাই স্কুলের ছাত্র তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর একজন কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করি। ১৯৬৮ সালে আমাকে চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ হাই স্কুল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে স্কুল থেকে মিছিল বের হয়। মিছিলে পুলিশ লাঠি চার্জ করে ছত্র ভঙ্গ করে দিলে বিক্ষিপ্ত ইট-পাটকেল ছোড়া-ছুড়িতে পুলিশের এক দারোগার মাথা ফেটে রক্ত বের হয় এবং মিছিলের অধিকাংশ ছেলে পাকশী বাজারের বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নেয়। কিছুক্ষণ পরে পাবনা থেকে দাঙ্গা পুলিশ বাহিনী এসে সমস্ত বাজার ঘেরাও করে গণগ্রেপ্তার করে। সেই গণগ্রেপ্তারে আমিও গ্রেপ্তার হই। সেই আমার প্রথম কারাগারে যাওয়ার অভিজ্ঞতা, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন কোষাধক্ষ্য পাকশীর কৃতি সন্তান আব্দুল আজিজ (আজিমুদ্দিন ভাই) আমাদের ছাড়িয়ে আনেন। ঐ সময় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য রাজশাহী এবং খুলনা গিয়েছি। বঙ্গবন্ধু ফেরি ঘাট দিয়ে পার হওয়ার সময় খুব কাছ থেকে দেখার এবং ফুলের মালা দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। ১৯৬৯-৭০ সালে চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপিঠ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয় আমাকে। এসএসসিতে খুউব ভাল ফলাফল করে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ি। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ে। এবং ৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্থানের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেন স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোন উপাই নেই। ফলে ছাত্র নেতৃবৃন্দকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে তৈরি হতে নির্দেশ দেন। আমরা স্বাধীনতার লক্ষ্যে নিজেদের প্রস্তুত করার লক্ষ্যে সংগঠিত হতে থাকি। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ঘটনার পরে সারাদেশ কার্যত নির্দেশেই চলছিল। অসহযোগ আন্দলনের ফলে বাংলাদেশের সমস্ত এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। পাবনাতে তখন থাকা সম্ভব ছিল না। আমি পাকশীতে এসে স্থানীয় ভাবে ক্যাম্প করে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছিলাম। সেই ক্যাম্পে স্থানীয় ভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে যুদ্ধ এর প্রস্তুতি শুরু হয়। আমরা তখন পাকবাহিনীর রেশনের ওয়াগন ঈশ্বরদী থেকে নিয়ে এসে ঐ রেশন দিয়ে ক্যাম্পের খাওয়ার ব্যবস্থা করি। ইতিমধ্যে ২৫ এ মার্চ পাক বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র মানুষের ওপরে ঝাপিয়ে পড়ে। ২৫ এ মার্চ গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ডাক দেন। ২৯ মার্চ পাবনার মাধপুরে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করি। রাজু, রাজ্জাক, গফুর, ওহি, নবাব সহ ১৭ জন বীর যোদ্ধা শহীদ হন। আমরা যুদ্ধের প্রতক্ষ্য অভিজ্ঞতা লাভ করি। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রে উজ্জিবীত হয়ে হাজার হাজার মানুষ শুধু লাঠি, বল্লম নিয়ে ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। পাক বাহিনীর ঐ ব্রিগেট সম্পূর্ণ ধ্বংশ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে পাক বাহিনীর ১১ এপ্রিল পাকশী-ঈশ্বরদী দখল করলে আমরা হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পার হয়ে ভারতে চলে যায়। ভারতের চাকুলীয়তে ট্রেনিং নিয়ে পাক বাহিনী ও তাদের দস্যুদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সাহসীকতার সাথে যুদ্ধ করি।
মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ্ আরও বলেন, স্বাধীনতার পর কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া এবং ছাত্রলীগের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ি। ইতি মধ্যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের বক্তব্য দিয়ে জাসদ ছাত্রলীগের জন্ম হয়। ঈশ্বরদীর পাকশীতে তাদের প্রভাব ব্যাপক বৃদ্ধি পায় বিশেষ করে ছাত্র যুবক মুক্তিযোদ্ধাদের একটা বড় অংশ জাসদ ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত হয়। এই রকম রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল ভাই ও জাতীয় নেতা মোঃ নাসিম ভাই আমাকে এলাকায় থেকে সংগঠনের কাজ করতে বলেন। তখন বাধ্য হয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে এডওয়ার্ড কলেজে বিএসসি তে ভর্তি হই এবং এলাকায় ছাত্র যুবকদের সংগঠিত করার উদ্দ্যোগ নেই এবং অনেকটা সফল হই।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট আমার বিএসসির কেমেস্ট্রির প্রেক্টিক্যল পরীক্ষা ছিল। আমি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বের হয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার সমর্থদের আক্রমনের শিকার হয়ে প্রতিজ্ঞা করি আওয়ামীলীগ পুনরায় ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত বিয়ে বা সংসার করবো না। এর পরে পাবনার বকুল ভায়ের সাথে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোর নেওয়ার জন্যে ভারতে চলে যায়। ওখানে কিছুদিনের মধ্যে বুঝতে পারি, এভাবে যুদ্ধ করে দেশ মুক্ত করা সম্ভব না। তখন আবার চলে আসি। আমি হঠাৎ করেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যায়। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে পুনরায় পাবনার বীরমুক্তিযোদ্ধা বকুল ভায়দের সাথে হেটে হেটে কখনো বাইসাইকেলে সারা পাবনা জেলায় আওয়ামীলীগের সংগঠন দাঁড় করানোর চেষ্টা করি। তখন পাবনা জেলার কোথাও আওয়ামীলীগের মিটিং করার মতো অবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধুর কথা বা আওয়ামীলীগের কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না। এমতবস্থায় বকুল ভায়ের পরামর্শে রুপপুরে বীরমুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান সেলিমের আমবাগানে প্রকাশ্যে সর্বপ্রথম আওয়ামীলীগের মিটিং আমরা করতে সমর্থন হই। সেখানে বকুল ভাই সহ পাবনা জেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়েছিলেন। রুপপুর তখন আওয়ামীলীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি ছিল। অনেকের পরামর্শে শ্রমিক শ্রেণীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য পরিবারের অমতে পাকশী পেপার মিলে শিক্ষানবিশ হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করে পর পর ৯ বার শ্রমিকলীগের মনোনায়নে শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে সিবিএর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীলীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অত্র অঞ্চলের ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দেশে আসার পর হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ভোট ও ভাতের অধিকার সহ মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হই। জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হই। মিথ্যা মামলায় অনেকবার কারাগারে গিয়েছি। তবে কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর পাবনা ঈশ্বরদীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সংবর্ধনা এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ আমাকে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, জামাত বিএনপির ব্যপক নির্যাতনের মুখেও জীবনের মায়া ভাগ করে আমি সংগঠনের কাজ করেছি। মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার উত্তরবঙ্গের ট্রেন সফরের সময় ঈশ্বরদীতে ব্যাপক গোলাগুলি ও বোমা বাজির মুখে আমি আহত হয়ে ট্রেনের মধ্যে মাননীয় নেত্রীর সাথে দেখা করি। উনি সাহসের সাথে আমাকে দলের জন্য কাজ করতে বলেন। ২০০৩ সালে জামাত বিএনপির অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় আমাকে সেনাবাহীনি গ্রেপ্তার করে ব্যাপক নির্যাতনের পর বিশেষ ক্ষমতা আইনে প্রায় দেড় বছর কারাগারে আটক রাখে। ১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেত্রত্বে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে ১৯৯৭ সালের ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম এবং পাকশী পেপারমিল সিবিএ সভাপতি রাজ বাবুল হক আমাকে হঠাৎ করে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমার প্রতিজ্ঞাও রক্ষা হয়।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত ১/১১ এর সরকার ক্ষমতায় এসে সেনা বাহিনি আমাকে গ্রেপ্তার করে ব্যপক নির্যাতনের পর কারাগারে ২ বছরেরও বেশি সময় বিশেষ ক্ষমতা অইনে আটক রাখে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকের ক্ষেত্রে হাই কোর্টের সামনে হাজির করার বিধান থাকায় কেন্দ্রিয় কারাগারে আমাদের নিয়ে যেত। কেন্দ্রিয় কারাগারে থাকার সময় অনেক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সান্নিদ্ধে আসার সম্ভব হয়েছিল। তবে সব চাইতে গুরুত্বপুর্ন বিষয় ছিল বঙ্গবন্ধু স্বঘোষিত হত্যাকারী আটক কর্ণেল ফারুকের গায়ে থুতু মেরে হত্যাকারীর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিল।
শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ৩৫ জনের কমিটিতে আমি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, কার্যকারী সদস্য ও সহ-সভাপতি হিসাবে দীর্ঘ প্রায় ২৩-২৪ বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ হয়েছিল। বর্তমানে পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকারী সদস্য ও ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়য় সহ- সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি আশা করি, রাজনীতিতে সারা জীবনের সততা, আন্তরিকতা, বলিষ্ঠতা ও নির্যাতিত হওয়ার স্বীকৃতি স্বরুপ ৭১ পাবনা-৪ সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নের নৌকা প্রতিকের নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের সুযোগ করে দিবেন বিশ্ব মানবতার মা, বাংলাদেশের উন্নয়নের উপকার, বিশ্বের সৎ, দক্ষ ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে স্বীকৃত বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ব শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হব্বুল, সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, পাকশী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম, পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৩নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান টোকন, ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি এ এম সাইফুল হক বাবুল, পাকশী রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি ইকবাল হায়দার ও পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমূখ।
Leave a Reply