ঈশ্বরদীতে প্রকাশ্যে দিবালোকে ওয়ালিফ হোসেন মানিক (৩৫) নামের এক যুবলীগ কর্মীকে প্রথমে গুলি করে ও পরে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম শহীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহত মানিক পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর পাকার মোড় এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে এবং পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টুর ছোট জামাতা। তিনি পাকশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমানে যুবলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে তার পরিবার ও স্থানীয় সূত্র।
বালুর ব্যবসা ও রাজনৈতিক পূর্বশত্র“তা, চাঞ্চল্যকর যুবলীগ কর্মী টুনটুনি’র হাতকাটা ও টুনটুনির ছোট ভাই ছাত্রলগি কর্মী তাফসির আহমেদ মনা হত্যাকান্ডের জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, ২০২৩ সালের ১৭ জুন রাত ১১টার দিকে উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের এমপি মোড়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী তাফসির আহম্মেদ মনা (২৪)। সেই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন পাকশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমানে যুবলীগ কর্মী ওয়ালিফ হোসেন মানিক। গ্রেপ্তার হয়ে মানিক ১ বছর জেল খেটে গত ২০ দিন আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে রোববার রূপপুরে তার বাড়িতে আসেন।
নিহত মানিকের পিতা ইউনুস আলী জানান, ’আজ সোমবার সেই মামলায় আদালতে হাজিরার তারিখ ছিল। মানিক সকালে আমার কাছে টাকা চাইলো আদালতে যাওয়ার জন্য। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় যাবার পরপরই ৮ থেকে ১০ জন এসে তাকে প্রথমে গুলি করে। এরপর সে মাটিতে পড়ে গেলে তার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।’ ইউনুস আলী আরও বলেন, ঘটনার সময় সন্ত্রাসীদের কয়েকজনের গায়ে রূপপুর প্রকল্পের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এপ্রোন গায়ে ছিল। আমি তাদের মধ্যে ৬ থেকে ৮ জনকে চিনতে পেরেছি।
পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাফিউল ইসলাম বলেন, পূর্ব শত্র“তার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের আলমত সংগ্রহ ও আসামিদের শনাক্তের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মূলত গত বছর ১৭ জুন ছাত্রলীগ কর্মী মনা হত্যাকান্ড এবং ২০১৫ সালের ১ জুন ছাত্রলীগ কর্মী টুনটুনির হাত কেটে সেই কাটা হাত নিয়ে উল্লাস করার আলোচিত ঘটনার জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। নিহতের স্বজন, এলাকার বাসিন্দা ও পুলিশও প্রাথমিকভাবে এমন ধারণা করেছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ঈশ্বরদীর রূপপুর মোড় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রনসহ রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চলে আসছে। এসব বিরোধের জেরে ২০১৫ সালের ১ জুন বিকেলে রূপপুর মোড় এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সৌরভ হোসেন টুনটুনি (২৬) নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীর বাম হাত কেটে প্রকাশ্যে সেই কাটা হাত হাতে নিয়ে উল্লাস করে প্রতিপক্ষ। ওই ঘটনার পর থেকে স্থানীয়ভাবে সৌরভ হোসেন টুনটুনির নাম হয়ে যায় ‘হাত কাটা টুনটুনি’। সেই ঘটনার পর ২০২৩ সালের ১৭ জুন রাতে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের এমপি মোড়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন সৌরভ হোসেন টুনটুনির ছোট ভাই আরেক ছাত্রলীগ কর্মী তাফসির আহম্মেদ মনা (২৪)।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম শহীদ বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে তথ্য পেয়েছি কারা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। আশা করছি তাদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে পারবো।’
Leave a Reply