শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বলাৎকারের চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে শিশু জিহাদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ॥ লম্পট নরপিশাচ গ্রেফতার নবাগত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে ঈশ্বরদী কিন্ডার গার্টেন এ্যাসোসিয়েশন নের্তৃবৃন্দের ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় ঈশ্বরদীতে নিখোঁজের একদিন পর শিশুর বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার ॥ একজন আটক সকাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত আছাদ ফুড প্রোডাক্ট’র নামে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ রূপপুর-বগুড়া গ্রিড লাইনে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঈশ্বরদীতে ইজিবাইক চালকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার ঈশ্বরদী বাজারে গ্রীল কেটে ও তালা ভেঙে চার দোকানে চুরি ঈশ্বরদীতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ক্ষুদ্ধ গ্রাহক “গ্রামে বিদ্যুৎ যায় না আসে”
শিরোনাম :
বলাৎকারের চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে শিশু জিহাদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ॥ লম্পট নরপিশাচ গ্রেফতার নবাগত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে ঈশ্বরদী কিন্ডার গার্টেন এ্যাসোসিয়েশন নের্তৃবৃন্দের ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় ঈশ্বরদীতে নিখোঁজের একদিন পর শিশুর বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার ॥ একজন আটক সকাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত আছাদ ফুড প্রোডাক্ট’র নামে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ রূপপুর-বগুড়া গ্রিড লাইনে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঈশ্বরদীতে ইজিবাইক চালকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার ঈশ্বরদী বাজারে গ্রীল কেটে ও তালা ভেঙে চার দোকানে চুরি ঈশ্বরদীতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ক্ষুদ্ধ গ্রাহক “গ্রামে বিদ্যুৎ যায় না আসে”

 

সড়ইকান্দিতে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের দূষিত বর্জ্যে কৃষকের সর্বনাশ!

মহিদুল ইসলাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১
  • ২৬৭ বার

মহিদুল ইসলাম ॥
ঈশ্বরদীতে দুই ফসলি কৃষি জমি ভরাট করে গড়ে তোলা অপরিকল্পিত শিল্প কল-কারখানার দূষিত বর্জ্যে প্রায় ১০০০ একর ফসলি জমি পানির নিচে চলে গেছে। গত ৪ বছর ধরে শিল্প কল-কারখার ওই দূষিত বর্জ্যরে কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি এবং দ্রুত সেই সমস্থ বর্জ্যে অপসারণের দাবি জানিয়েছে শতাধিক গ্রামবাসী। গতকাল রবিবার সকালে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ও মুলাডুলি ইউনিয়নের ৫ গ্রামের শতাধিক তিগ্রস্থ কৃষক একত্রি হয়ে মিলের দূষিত বর্জ্য ও পানি নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ও রাস্তা কেটে এবং ক্যানেল পরিস্কার করে পানি অপসারণের কাজ শুরু করেন। এর আগে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর একই দাবিতে দাশুড়িয়া-মুলাডুলি মহাসড়কের সড়াইকান্দি এলাকায় বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে তিগ্রস্থত শত শত কৃষক ও স্থানীয় এলাকাবাসী। কর্মসূচী থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আবাদি জমি থেকে দূষিত বর্জ্যে অপসারণ করার আল্টিমেটাম দেয়া হলেও ৭ মাসেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তিগ্রস্থ কৃষক সাইফুল ইসলাম ও ডাবলু হোসেন জানান, মুলাডুলি ও দাশুড়িয়া এই দুই ইউনিয়নের সরাইকান্দি, লক্ষ্মীকোলা, চাঁদপুর, দরগাপাড়া, কারিগরপাড়া, দেবীপুর, বহরপুর, রামচন্দ্রপুর ও দাশুড়িয়া ট্রাফিক মোড়ের একাংশের আবাদী জমিতে বছর জুড়েই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এখনকার প্রায় ১০০০ একর জমিতে এখন আর কোন ফসল হয় না। কৃষকরা ফসল ফলাতে না পেরে দুঃখ দুর্দশায় জীবন অতিবাহিত করছে। এর উপর গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনে জলাবদ্ধতা আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। যার ফলে পানিবন্দি অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন তারা।
ইমরান, জমিন ও আল-আমিন নামের অপর কৃষকেরা জানান, পানিবন্দি অবস্থায় থাকতে থাকতে পানি বাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দূর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন তারা। তারা জানান, এক সময় কৃষাণ-কৃষাণীর কর্মচাঞ্চল্যেতায় দিনভর মুখরিত হয়ে থাকতো মুলাডুলির ভদ্রার বিল। শত শত একর জমি জুড়ে ফলতো সোনার ফসল। এ ফসল দিয়ে জীবন জীবিকার নির্বাহ করতেন হাজারো কৃষক পরিবার। সেই বিল এখন নীরব-নিস্তব্ধ। জলাবদ্ধতা ও কারখানার দুষিত বর্জ্যের কারণে বিলের বুক জুড়ে এখন কচুরিপানার রাজত্ব। তিন বছর ধরে এ বিলের কৃষি জমির ফসলের উপর নির্ভরশীলদের জীবন দুঃখ বেদনা ও হতাশায় ভরে গেছে। বিলের পানি নিস্কাশনের মুখে অপরিকল্পিতভাবে রশিদ পেপার মিল ও এ আর পোল্ট্রি হচ্যারী সহ বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে তোলায় বর্ষাকালে বিল থেকে পানি বের হতে পারছে না। শুধু ভদ্রার বিলই নয়, এই বিলের পশ্চিম পাশে প্রায় ৩০০ একর জমিতেও এখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই জমির পানিও ভদ্রার বিল দিয়ে বের হয়ে যেত। বিল ভরাট করে গড়ে তোলা কলকারখানার দূষিত পানি ও বর্জ্যে বিলের পানিকে করছে দুষিত। দুষন আর জলাবদ্ধতার কারণে ভদ্রার বিল এ অঞ্চলের ১০ গ্রামের মানুষের দুঃখ ও দুর্দশার কারণে পরিণত হয়েছে।
সরইকান্দি গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, সরইকান্দি এলাকায় জলাশয় ভরাট করে রশিদ পেপার মিল নির্মাণ করা হয়। পেপার মিল নির্মাণের স্থান দিয়েই ভদ্রার বিলের পানি বের হয়ে যাওয়ার প্রধান নালা ছিল। ২০১৭ সাল থেকে পেপার মিল নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর এই নালা বন্ধ করে দেয়া হয়। বিলের পানি বের হওয়ার আর কোন বিকল্প পথ না থাকায় বিলের শত শত একর জমি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই বিলের জমিতে বছরে দুইটি ফসলের আবাদ করা যেত। জলাবদ্ধতার কারণে এখানে তিন বছর ধরে কোন আবাদ হয় না। পেপার মিল ছাড়াও আশপাশে আরো বেশ কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠেছে। জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার কৃষকরা বাধ্য হয়েই শিল্প কারখানার মালিকদের কাছে স্বল্প মূল্য জমি বিক্রি করে দিচ্ছে।
দাশুড়িয়া এলাকার আফজাল হোসেন জানান, এই এলাকার কৃষকদের দুঃখের কথা বলে শেষ করা যাবে না। বছরে দুইবার যে জমিতে আবাদ হতো। সেখানে বছরের পর বছর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। যারা চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো তারা অভাব অনটনের কারণে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়ে কেউ রিক্সা, ভটভটি ও অটোবাইক চালিয়ে জীবন নির্বাহ করছে।
মুলাডুলির দরগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন মিঠু বলেন, ২০১৭ সাল থেকে এখানকার শত শত একর জমি জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। ২০১৭ সালের ১৬ আগষ্ট এলাকাবাসী জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিশাল বিােভ সমাবেশ করেছিল। তখন জলাবদ্ধতা দূরিকরণের জন্য পেপার মিল কর্তৃপ উদ্যোগ নিবেন বলে প্রতিশ্র“তি দিলেও সেটা তারা কার্যকর করেনি। প্রভাবশালী শিল্পপতিদের খামখেয়ালিপনার কারণে শত শত একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের প্রশাসনের মাধ্যমে হয়রানী করা হয়। এই বিল এলাকায় যেসব পুকুর রয়েছে এসব পুকুরও এখন মাছ চাষে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে এসব পুকুরে পেপার মিলের দুষিত পানি ঢুকে পুকুরের পানি দুষিত করেছে। ফলে পুকুরে আর মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দাশুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, এখনকার কৃষকদের দুঃখ দুর্দশার কথা আমি শুনেছি। এই বিলটি মুলত মুলাডুলি ইউনিয়নের মধ্যেই পড়েছে। সেখানকার জমির মালিকরা কোন উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমি অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করবো। মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম মালিথা বলেন, ভদ্রা বিল ও বিলের পশ্চিম পাশের আবাদি জমিতে জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমি জানি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আমার কাছে কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ নিয়ে এলে যথাযথ পদপে গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল লতিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি ঈশ্বরদী কৃষি অফিসে যোগদানের পূর্ব থেকেই এখানে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা ও পুকুর খননের কারণে এটি মুলত হয়েছে। এছাড়াও এসব জমির পানি কমলা নদী দিয়ে বের হয়ে যেত সেই নদীর গভীরতাও কমে গেছে। পাবনা জেলার কৃষি বিষয়ক একটি আলোচনা সভায় এ বিষয়টি আমি উপস্থাপন করেছিলাম। কমলা নদী খনন করে এই বিলের পানি সেখান দিয়ে বের হওয়ায় পথ তৈরি করে দিলে জলাবদ্ধতা দূর হবে। পানি উন্নয়নের বোর্ডের তত্বাবধায়নে পাবনা ও নাটোর জেলার কর্মকর্তাদের এবিষয়ে পদপে নিতে হবে।
এ ব্যাপারে রশিদ পেপার মিলের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..