ঈশ্বরদীর নির্মানাধীন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে গভীর ষডযন্ত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে ঈশ্বরদীতে বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ঈশ্বরদী শহরের ষ্টেশন সড়কে ঈশ্বরদীর সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজারো নারী-পুরুষ অংশ গ্রহণ করেন। আয়োজিত কর্মসূচীতে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিষ্টদের গভীর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফজলুর রহমান।
সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মী ওহিদুজ্জামান টিপুর সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকদল নেতা মোঃ আহসান হাবিব, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান শাহীন, সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ, ঈশ্বরদী সাহিত্য-সংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস আলমগীর, ঈশ্বরদী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ নান্নু রহমান, সহ-সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন জনি, সমাজকর্মী শামসুদ্দোহা পিপ্পু, ব্যবসায়ী ইমরুল কায়েস সুমন, বিএনপি নেতা আবু সাঈদ লিটন, ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম নয়ন, নারী নেত্রী সাথী খাতুন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইব্রাহিম হোসেন প্রমূখ। এছাড়াও আয়োজিত কর্মসূচীতে ঈশ্বরদীর হাজারো বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজিত কর্মসূচী থেকে রূপপুর প্রকল্প বন্ধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও এবং ফ্যাসিষ্টদের কালো থাবা গুড়িয়ে দাও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রূপপুর প্রকল্প নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সকল ক্ষেত্রে অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে, রূপপুর প্রকল্প এলাকা অস্থিতিশীল করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্রের রহস্য উন্মোচন করতে হবে, রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, অবিলম্বে রূপপুর প্রকল্প চালু করে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবেসহ বিভিন্ন দাবী জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফজলুর রহমান বলেন, প্রকল্প এলাকায় দাবি আদায়ের নামে বিশৃংখলা সৃষ্টির কারণে প্রকল্প চালু করে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে অনিশ্চতার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে ঈশ্বরদীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের প্রকল্পকে বন্ধ করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রখে দাঁড়াতে আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। তিনি আরো বলেন, এই মূহুর্তে প্রকল্পের ৯৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসেই গ্রীডের সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরপর ডিসেম্বরে স্টার্টআপ করার কথা। এই অবস্থায় প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করে বিশৃংখলা সৃষ্টির ঘটনা অশুভ সংকেত। তিনি আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এনপিবিসিএল-এ প্রায় দুই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োাগ দেওয়া হয়েছে। যোগ্যতা থাকা সত্বেও এসময় বিএনপি ও বিরোধীদলের কাউকে নিয়োগ বা যোগদান করতে দেয়া হয়নি। এবিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করতে এবং ফ্যাসিস্টদের দোসর যারা রয়েছে তাদের চিহিৃত করার দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) অপসারণসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের নামে ঈশ্বরদীর রূপপুরে কোম্পানির প্রায় ১ হাজার ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী গত ২৮ এপ্রিল আন্দোলন শুরু করে গত ৬ মে তাঁরা ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। পরদিন ৭ মে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে কোম্পানির অফিসের সামনেও তারা অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন। এতে এনপিসিবিএল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি ও কোম্পানির আইন মেনে চলার চিঠি দেয়। না মানায় পরদিন ৮ মে কোম্পানির ১৮ জনকে চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। এভাবে একই ঘটনার দায়ে গত মঙ্গলবার আরও ৮ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মূলত এসব কারণেই নানা ধরণের বিশৃংঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে।
Leave a Reply