পাবনার ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীতে জেলে ও চরের জমিতে চাষাবাদ করা কৃষকের উপর হামলা ও মারপিটের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব চত্বরে এসব কর্মসূচী পালন করেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও জেলেরা। তারা জানান, পদ্মা নদীর সাঁড়া ঘাট সংলগ্ন চরাঞ্চলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতন। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পদ্মা নদীর চরে সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলি বর্ষণ, মারামারি, কৃষকের উপর হামলা ও গরু লুটের ঘটনা ঘটেছে। এতে পদ্মা নদী সংলগ্ন প্রান্তিক কৃষক ও জেলেরা চরম উদ্বেদ ও উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন।
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘটনার জন্য চরাঞ্চলের অন্যতম সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী নেতা ইঞ্জিনিয়ার কাকনকে অভিযুক্ত করে লিখিত বক্তব্য দেন কৃষক আব্দুল মোত্তালিব। তিনি বলেন, ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদীর সাঁড়া ঘাট ও চরাঞ্চল এলাকায় স্থানীয় কৃষকরা ধান, বাদাম ও গম সহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এছাড়াও সেখানে গরু ও মহিষ চড়িয়ে তাদের লালন-পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়। কিন্তু সেখানে জঙ্গি আস্তানা করে নদী ও নদীর তীঁরবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে আওয়ামীলীগ নেতা ও চরমপন্থি দলের সক্রিয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার কাকন ও তার সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। সন্ত্রাসী কাকনের নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত অসহায় কৃষকদের উপর হামলা, মারধর, ফসল ও গবাদী পশু লটের ঘটনা ঘটছে। গত ২৫ মে (রবিবার) সাঁড়া ঘাট এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক পদ্মা নদীর চরে কৃষি কাজ ও গরু চড়াতে গেলে সন্ত্রাসী কাকন তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে রক্তাত্ব জখম করে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে সময় কৃষকদের দুইটি গরু ছিনিয়ে নিয়ে পদ্মার চরে তারা আনন্দ উল্লাস আর সেই গরু জবাই করে ভুরিভোজ করে।
এরআগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে কৃষকরা জানান, তারা সকলেই প্রান্তিক কৃষক। পদ্মা নদীতে জেগে উঠা নিজস্ব ও চরের জমি বন্দবস্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছিলেন। কিন্তু সেই চরে বর্তমানে আস্তানা গেরে সন্ত্রাসী ইঞ্জিনিয়ার কাকন বাহিনী সেখানে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। কেউ চরে গেলেই তাদের উপর হামলা চালিয়ে মারপিটসহ রক্তাক্ত জখম করছে কাকনের সন্ত্রাসী বাহিনী। সেখানে এক অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে বলেও জানান ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা।
কৃষকরা আরও বলেন, সন্ত্রাসী কাকন বাহিনী বছরের পর বছর জোরপূর্বক ভাবে চরের শত শত বিঘা জমি দখল এবং পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে পদ্মা নদী এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সেখানে বাঁধা সৃষ্টি করে সন্ত্রাসী কাকন সহ তার সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হলে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ করে কাকন বাহিনী। গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) পদ্মা নদীর দখল দ্বারিত্ব নিয়ে গোলাগুলির ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা আরও বলেন, পদ্মা নদীর চরাঞ্চল এখনও আওয়ামী সন্ত্রাসী ইঞ্জিনিয়ার কাকন বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে। সেখানে পতিত আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানা রয়েছে। পদ্মা নদীসহ এই অঞ্চল অশান্ত করতে তারা গভীর পরিকল্পনা করছে বলেও জানান তারা।
আয়োজিত কর্মসূচীতে কৃষক ও জেলেদের দাবীর প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাঁড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আক্কাস আলী, পৌর বিএনপি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসলাম হোসেন জুয়েল, সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন জনি, সন্ত্রাসী হামলায় আহত কৃষক আরাফাত মন্ডল, মাজেদুল মন্ডল, চাষা হালদার প্রমূখ। সে সময় কয়েক’শ কৃষক ও জেলে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার (২৫ মে) সাঁড়া ঘাটের কয়েকজন কৃষক পদ্মা নদীর চরে গরু চড়ানো এবং কৃষি কাজে গেলে আওয়ামী সন্ত্রাসী ইঞ্জিনিয়ার কাকন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা ও মারপিট করে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) পদ্মা নদীর দখল দারিত্ব নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে গোলাগুলি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে।
Leave a Reply