ঈশ্বরদীতে বলাৎকারের চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে জিহাদ হোসেন (৯) নামের এক স্কুলছাত্র কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় লম্পট আসিফ (৩১) নামের নরপিশাচ কে গ্রেফতার করেছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ। গত শনিবার (৬ জুলাই) ভোরে ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মুনসিদপুর তেঁতুলতলা গ্রামস্থ পরিত্যক্ত খাদ্য গুদামের ঝোপের মধ্যে বিবস্ত্র অবস্থায় শিশু জিহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত জিহাদ হোসেন মুনসিদপুর গ্রামের প্রবাসী হাসেম আলীর ছেলে ও দাশুড়িয়া কিন্ডারগার্টেনের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। আর লম্পট নরপিশাচ আসিফ পার্শ্ববর্তী মানিকৈড় গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
গতকাল রবিবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত আসামীসহ লোমহর্ষক এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ। ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী হত্যাকান্ডের পুরো বিষয়টি ব্রিফ করে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
লিখিত বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, গ্রেফতারকৃত আসামী আসিফ পেশায় একজন ট্রলি গাড়ী চালক। সে একজন মাদকাসক্ত এবং বিকৃত যৌন মানষিকতার অপরাধী। সে ঘটনার দিন দাশুড়িয়া তেঁতুলতলা সিএন্ডবি গোডাউনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনার পরিত্যক্ত ভাঙ্গা বিল্ডিংয়ের মধ্যে ইয়াবা সেবনের জন্য যায়। অপরদিকে শিশু জিহাদ বৃষ্টির মধ্যেই উক্ত বিল্ডিংয়ের অদূরে তার বন্ধু পিয়াস এর সাথে খেলা করছিল। এমন সময় জিহাদের মেজো ভাই শুভ সেখানে গিয়ে শিশু ‘জিহাদের শরীর ভেজা দেখে জিহাদকে বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে শুভ ও পিয়াস পার্শ্ববর্তী জনৈক সোহেলের বাড়িতে চলে গেলে শিশু জিহাদ একটি আম খেতে খেতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পরিত্যক্ত ভাঙ্গা বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় আসামী আসিফ ইয়াবা সেবন শেষে ঐ পরিত্যক্ত ভাঙ্গা বিল্ডিংয়ের বারান্দায় বের হলে হঠাৎ তাদের সামনা-সামনি দেখা হওয়ায় শিশু জিহাদ ভয়ে থমকে যায়। সে সময় আসামী আসিফ তখন জিহাদ কে বলে, ‘ভয় পাচ্ছো কেন? এদিকে এসো।’ তখন জিহাদ ভাঙ্গা বিল্ডিংয়ের মধ্যে দক্ষিণ পাশের রুমে আসামীর কাছে আসলে আসামী আসিফ বিকৃত যৌনকামনা চরিতার্থ করার মানসে শিশু জিহাদকে জাপটে ধরে আর তাকে বিবস্ত্র করে। তখন জিহাদ প্রচন্ড জোরাজোরি করে আর চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় আসামী আসিফ শিশু জিহাদের গলা চেপে ধরে এ সময় জিহাদ আত্মরক্ষার জন্য মর্মান্তিকভাবে জানালার ওয়ালের সাথে নিজের মাথা আছড়াতে থাকে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে শিশু জিহাদ শ্বাস রোধ হয়ে মারা যায়। শিশু জিহাদ মারা গেছে বুঝতে পেরে আতঙ্কিত হয়ে আসামী আসিফ তড়িঘড়ি করে শিশু জিহাদের প্যান্ট আর স্যান্ডেল জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয় আর শিশু জিহাদের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পাশের রুমে পড়ে থাকা পুরাতন ছেঁড়া প্লাস্টিকের পাটি এনে জিহাদকে পাটি দিয়ে মুড়িয়ে কোলে করে ঐ বিল্ডিংয়ের পাশেই একটি মরা নারিকেল গাছের তলায় ঝোপের মধ্যে রেখে দ্রুত পালিয়ে যায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িত আসামীকে গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির ভিত্তিতে জোর তৎপরতা চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে শিশু জিহাদ হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামী আসিফ (৩১) কে সনাক্ত পূর্বক বনপাড়া বাজার থেকে পালানোর সময় গ্রেফতার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংএ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী ছাড়াও ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম, ওসি তদন্ত মনিরুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৫ জুলাই) খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশু জিহাদ হোসেন। নিখোঁজের একদিন পর গত শনিবার (৬ জুলাই) ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মুনসিদপুর তেঁতুলতলা গ্রামস্থ পরিত্যক্ত খাদ্য গুদামের ঝোপের মধ্যে বিবস্ত্র অবস্থায় শিশু জিহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত জিহাদ হোসেন মুনসিদপুর গ্রামের প্রবাসী হাসেম আলীর ছেলে ও দাশুড়িয়া কিন্ডারগার্টেনের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র।
Leave a Reply