ঈশ্বরদীতে সুমাইয়া মন্ডল (১৮) নামে এক গৃহবধুকে যৌতুকের দাবিতে হত্যার অভিযোগে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের রেলগেট ট্রাফিক মোড়ে এ মানববন্ধন ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
নিহত সুমাইয়া মন্ডল ঈশ্বরদী শহরের পশ্চিমটেংরি কাচারিপাড়ার দরিদ্র রিকশা চালক আরমান মন্ডলের মেয়ে। গত সোমবার (২২ এপ্রিল) শহরের পূর্বটেংরি কদমতলা এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় সুমাইয়ার মরদেহ উদ্ধার করে। তাঁর গলা ও হাতের আঙুলে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরিবারের দাবি, যৌতুকের কারণে স্বামী নির্যাতন করে সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার রাতেই থানায় তারা এ বিষয়ে অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। এ অবস্থায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও পথসভায় বক্তব্য দেন সুমাইয়ার বাবা আরমান মন্ডল, চাচা কোরবান মন্ডল, প্রতিবেশী স্বজন জোৎনা বেগম ও সফিকুল ইসলাম এমেল।
এসময় আরমান মন্ডল জানান, ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর পূর্বটেংরি কদমতলা এলাকার মৃত দৌলত খানের ছেলে তালাত মাহমুদের সঙ্গে সুমাইয়ার বিয়ে হয়। বিয়েতে তাদের সম্মতি না থাকলেও ছয় মাস পর মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু এক বছর পর জানা যায়, তালাত মাহমুদের আরও একটি স্ত্রী আছে। সেই স্ত্রীও আত্মহত্যা করে মারা যায়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে স্বামী তালাত তার মেয়ে সুমাইয়ার কাছে যৌতুক দাবি করে নির্যাতন ও মারধর শুরু করে। এমনকি রমজানের পাঁচ রোজার দিনে সুমাইয়াকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এদিকে সুমাইয়া হত্যার ঠিক দু’দিন আগে তালাত মাহমুদ সুমাইয়াকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। দু’দিন পরে তালাত হঠাৎ ফোন করে তাকে জানায় আপনার মেয়ে গলায় ফাঁস নিয়েছে। খবর পেয়ে তিনি শহরের পূর্বটেংরি কদমতলায় গিয়ে দেখেন, তালাতের শয়নকক্ষে সুমাইয়া অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। তার গলায় ও আঙ্গুলে আঘাতের একাধিক চিহ্ন। দ্রুত তাকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরমান মন্ডল অভিযোগ করেন, যৌতুকের কারণে তার মেয়েকে তালাত মাহমুদ ও পরিবারের সদস্যরা শারীরিকভাবে নির্যাতন করে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখে। এই ‘হত্যাকান্ডের’ ঘটনায় তিনি তালাত মাহমুদসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, গৃহবধূ সুমাইয়া মারা যাওয়া সম্পর্কে তার বাবা সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দেয়নি। তিনি শুধু ‘সংবাদদাতা’ হিসেবে ঘটনাটি থানায় জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply